আমরা অনেকেই চাকরি করতে করতে বিরক্ত হয়ে ব্যবসার কথা চিন্তা করি। কি ব্যবসা করবো? কিবাবে করবো? কেমন টাকা লাগবে? মাসে কত ইনকাম করা যাবে? এ বিষয় গুলো ক্লিলিয়ার করতে পারি না। তাই আমি আজ এখানে আমাদের একজন মোটতামটি সফল ক্লাইন্ট এর ব্যাবসার আইডিয়া তুলে ধরবো।
চাকরি বা ব্যবসা যাই বলেন না কেন, সবকিচুতেই মোটামোটি পরিশ্রম আছে। তবে চাকরিতে যে পরিশ্রম করতে হয়, সেই পরিমান পরিশ্রম ব্যবসায় করলে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি টাকা ইনকাম করা যায়।
ধাপ ১: ব্যবসা পরিকল্পনা
প্রথমে আপনকে ব্যবসার পরিকল্পনা করতে হবে। প্রতিটি কাজে সঠিক পরিকল্পনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে এরিয়াতে থাকেন বা ব্যাবসা করতে চান, সে এরিয়াতে কত গুলু দোকান আছে, কি কি পণ্যের চাহিদা আছে সে বিষয় গুলু নিয়ে একটু রিসার্চ করতে হবে।
মোটামোটি আপনার টার্গেটেড ৫০ টি দোকান থাকলেই আপনি শুরু করতে পারেন। মাসে একটি দোকানে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলে ২.৫ লাখ টাকার পণ্য সেল করার মার্কেটপ্লেস আপনার এরিয়াতে আছে।
ধাপ ২: পণ্য সিলেক্ট করা
পণ্য সিলেক্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনার এরিয়াতে কোন পণ্য গুলু চাহিদা ভালো সে সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে। এটা জানার জন্য আপনাকে অল্প কিচু পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
কোন পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করবেন? যে পণ্য গুলু সব এরিয়াতে সবসময় চাহিদা থাকে সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। যে পণ্য গুলু মানুষের নিত্য প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করা ভালো।
আমাদের একজন নিউ ক্লাইন্ট এর প্ল্যানটা এখানে শেয়ার করি।
ওনি প্রথমে ৬ টি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে।
- কটনবাড
- সরিষার তেল
- সুপারগুলু
- বলের টেপ
- ব্রাশ
- গ্যাস লাইট
এ ৬ টি পণ্য দিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছে। মোটামোটি সফল ভাবে এখন এ পণ্য গুলু সেল দিতেছে।
এ পণ্য গুলু সেল দিয়ে দৈনিক কিপরিমান আয় করা যায় তার একটা আনুমানিক হিসাবে নিচের টেবিল শেয়ার করলাম।
পণ্যের নাম | পরিমাণ | ক্রয় কৃত পাইকারি দাম | বিক্রয় পাইকারি দাম | খুচরা মূল্য |
কটন বার্ড | এক ডর্জন | 58 টাকা | 80 টাকা | 120 টাকা |
সরিষার তেল | এক ডর্জন | 300 টাকা | 370 টাকা | 600 টাকা |
সুপারগুলু | এক ডর্জন | 140 টাকা | 180 টাকা | 300 টাকা |
বল ট্যাব | এক ডর্জন | 160 টাকা | 180 টাকা | 300 টাকা |
ম্যাটাডোর ব্রাশ | এক ডর্জন | 140 টাকা | 170 টাকা | 300 টাকা |
গ্যাস লাইট | এক বক্স | 550 টাকা | 600 টাকা | 750 টাকা |
- এক ডজন কটন বাড থেকে লাভ করতে পারবেন ২২ টাকা ।
- এক ডজন সরিষার তেল থেকে লাভ করতে পারবেন ৭০ টাকা ।
- এক ডজন সুপারগ্লু থেকে লাভ করতে পারবেন ৪০ টাকা ।
- এক ডজন টেনিস বলে ট্যাব থেকে লাভ করতে পারবেন ২০ টাকা ।
- এক ডজন ম্যাটাডোর ব্রাশ থেকে লাভ করতে পারবেন ৩০ টাকা ।
- এক বক্স গ্যাস লাইট থেকে লাভ করতে পারবেন ৫০ টাকা ।
একদিনে পণ্য বিক্রি করার টার্গেট
পণ্যের নাম | পরিমাণ | লাভের পরিমাণ | মোট লাভের পরিমান |
কটন বার্ড | 5 ডর্জন | 22 x 5 | 110 টাকা |
সরিষার তেল | 5 ডর্জন | 70 x 5 | 350 টাকা |
সুপারগুলু | 5 ডর্জন | 40 x 5 | 200 টাকা |
বল ট্যাব | 5 ডর্জন | 20 x 5 | 100 টাকা |
ম্যাটাডোর ব্রাশ | 5 ডর্জন | 30 x 5 | 150 টাকা |
গ্যাস লাইট | 5 বক্স | 50 x 5 | 250 টাকা |
মোট | 1160 টাকা |
এটা হল মিনিমাম সেল করার টার্গেট । এ টার্গেটের পণ্য সেল দেয়ার জন্য মোটামোটি ১০ থেকে ১৫ টি দোকান হলেই যথেষ্ট। ।
যদি আপনি এই মিনিমাম টার্গেটটি পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনি সকল খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ১০০০ টাকা সেভ করতে পারবেন। মাসে ২৫ দিন মার্কেট করতে পারলে আপনার মোটামুটি ২৫ হাজার টাকা সেভ থাকবে। আর যদি আপনি দ্বিগুণ পণ্য বিক্রি করতে পারেন তাহলে মাসে ৫০,০০০ টাকা সেভ করতে পারবেন । যদিও অবস্থায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ইনকাম করা একটু কষ্টসাধ্য। পরবর্তী সময় যখন আপনি মার্কেটের সাথে পরিচিত হবেন তখন সহজেই চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবে।
ধাপ ৩: কত টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন?
প্রথম অবস্থায় আপনি অল্প কিছু টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন ।১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা হলেই আপনি এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি প্রথমে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মাল আমাদের পাইকার ওয়েব অথবা অন্য কোথায় থেকে কালেক্ট করতে পারেন। এ পণ্যগুলো বিক্রি করার পর আপনি আবার ১৫ হাজার টাকার অর্ডার করবেন। এই মাল বিক্রি করার পর আপনি যে প্রফিট হবে সবমিলিয়ে আপনি আবার ২০ হাজার টাকার মাল ক্রয় করতে পারবেন। এভাবে আপনি মাসে 6 থেকে 7 বার পণ্য অর্ডার করতে পারেন। তাহলে আর আপনার একসাথে এক মাসের জন্য মাল কিনার প্রয়োজন নাই এবং লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করারও প্রয়োজন পড়বে না।
যেহেতু পাইকার ওয়েবে অর্ডার করলে যথাসময়ে আপনার পণ্য আপনার নিকট পৌঁছে যাবে এবং আপনি এই পণগুলো অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি করতে থাকবে যে পণগুলো শেষ হয়ে যাবে আবার সেগুলো অর্ডার করবেন যথা সময় আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। এভাবে আপনি অল্প ইনভেস্ট দিয়ে ধীরে ধীরে আপনি আপনার ইনভেস্ট টাকে ভারী করতে পারবেন এবং ভালো পরিমাণে লাভ করতে পারবে।
ধাপ ৪: এ ব্যবসায়ে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
প্রথম কথা হল প্রতিটা ব্যবসায় লাভ লস থাকে। তবে এ ব্যবসায় লস নেই বল্লেই চলে কারণ এ পণ্যগুলো পচনশীল নয় এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এগুলো মানুষের প্রয়োজন হবেই এবং দোকানদারদেরও প্রয়োজন হবে তাই এগুলো আপনি যেকোন স্থানে এগুলো বিক্রি করতে পারবেন।
যদি সফল হওয়ার কথায় আসি, দেখুন আপনি যেকোনো মার্কেটিং চাকরি করেন না কেন আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টার্গেট ফুলফিল করতে হবে। ধরুন আপনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন আপনি দৈনিক ৮ ঘন্টা ডিউটি করে মাসে ৫ লক্ষ টাকার একটি টার্গেট ফুলফিল করতে হয় । এখানে আপনি আট ঘন্টা ডিউটি করে যদি তিন লক্ষ টাকার এই পণ্য বিক্রি করতে তাহলে আপনি মিনিমাম ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন কারণ এই পণ্যগুলোতে ২০% বেশি লাভ করা যায়।
এবার আপনি মিলিয়ে দেখুন চাকরি করে আপনি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আর ব্যবসা করে আপনি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। মার্কেটিং চাকরি এবং এই ব্যবসা একই দুইটাতেই আপনি পণ্য বিক্রি করতে হবে। দোকানে দোকানে আপনার পণ্য বিক্রি করতে হবে। এর জন্যেই মার্কেটিং এর চাকরি চাইতে এই ব্যবসাটি তিন থেকে চার গুণ বেশি টাকা ইনকাম করা যায়।
সো আপনার যদি মোটামুটি ইনভেস্ট থাকে এবং ব্যবসা করার মতো মন মানসিকতা থাকে বা ভালো কিছু করার মত মন মানসিকতা থাকে তাহলে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন এবং ভালো টাকা ইনকাম করতে পারেন ।
তাই বলা যায় এখানে সফল হওয়া খুবই সম্ভাবনা আছে। এভাবে আপনি ছোট ব্যবসা থেকে ধীরে ধীরে বড় একটি ব্যবসায় করতে পারবেন।